ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের (ডিপিএল) একটি ম্যাচ খেলতে গিয়ে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন তামিম ইকবাল। এরপর সাভারের কেপিজে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাকে হার্টে রিং পরানো হয়। বর্তমানে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন এ সাবেক অধিনায়ক। হার্ট অ্যাটাকের ধকল কাটিয়ে ধীরে ধীরে সুস্থও হয়ে উঠছেন বাংলাদেশের এই কিংবদন্তি। কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) থেকে সরিয়ে কেবিনে নেওয়া হয়েছে তাকে। সেখানে দু-এক দিন পর্যবেক্ষণের পর ঈদের আগেই ফিরতে পারবেন নিজ বাড়িতে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে আগেই অবসর নিলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন তামিম। বিপিএলে ফরচুন বরিশালকে টানা দুবার শিরোপা জেতানো বাঁহাতি এই ওপেনার চলমান ডিপিএলে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের অধিনায়কত্ব করছিলেন। তাই মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফেরা তামিম ক্রিকেটের বাইশ গজে আবার ফিরতে পারবেন কি না, সেটিই এখন আলোচনায়। যা নিয়ে কথা বলেছেন এভারকেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডপ্রধান অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) এভারকেয়ার হাসপাতালের তামিমের শারীরিক অবস্থা নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেন এভারকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকরা। এ সময় তামিম ক্রিকেটে ফিরতে পারবেন কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার বলেন, ‘ক্রিকেটে তিনি ফিরবেন কি না, সেটা তিন-চার মাস পর কার্ডিয়াক টিম ও ফিজিওরা তামিমের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার পর বলতে পারব।’
শাহাবুদ্দিন তালুকদার জানিয়েছেন, তামিম ধূমপানে অভ্যস্ত। যা তার হার্টের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। তাই তাকে সম্পূর্ণ ধূমপান ছাড়তে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সঠিক জীবনযাপনে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখন যেটা হবে, সেটা হলো রিহ্যাবিলিটেশন। রিস্ক ফ্যাক্টর মিটিগেশন, ওর যে রিস্কগুলো আছে। হি ইজ আ স্মোকার। হি হ্যাভ টু কুইট স্মোকিং। আর ওবেসিটি কন্ট্রোল করতে হবে। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। স্মোকিংটা হঠাৎ করে ও ছাড়তে…, প্রথমে তো ও বলেছিল আমি ছাড়তেই পারব না।’
তিনি আরও জানিয়েছেন, তামিম ধূপমান ছাড়তে চাইছিলেন ধীরে ধীরে। তবে তাতেও আপত্তি জানিয়েছেন চিকিৎসকরা, ‘পরে বলল আস্তে আস্তে ছাড়ব, ভেপ নেব। আমি বললাম না, ভেপও নিতে পারবে না। ভেপে ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে। তারপর আজকে (গতকাল) সকালে সে বুঝল, আমি বললাম যে ঠিক আছে, নিকোটিন প্যাচ বা নিকোটিন গাম আমরা দিই, হি এক্সেপ্ট ইট। এবং সে সিগারেট খেতে চাচ্ছে, কিন্তু আমরা এলাউ করতেছি না। কারণ এই সিগারেট খেলে উনার যে সমস্যাটা হইছিল, ভিটিপি; আবার হতে পারে।’
চিকিৎসকরা আরও জানিয়েছেন, তামিমের জন্য ওজন নিয়ন্ত্রণও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার জন্য দীর্ঘমেয়াদি সুস্থতা নিশ্চিত করতে ধূমপান ছাড়ানোর পাশাপাশি সঠিক জীবনযাপনে গুরুত্ব দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার বলেন, ‘এমন হার্ট অ্যাটাকের পর এসব রোগীর খুবই সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তাদের এটা হওয়ার প্রবণতা আবার থাকতে পারে। ব্লক না হলেও হতে পারে। তাই ওনাকে অ্যাসেস করতে হবে, নিয়মিত ফলোআপে থাকতে হবে। লাইফস্টাইল বদলাতে হবে, মোটিভেশন করতে হবে। ডায়েট, ডিসিপ্লিন ও ড্রাগ— মেডিকেল টিম ও তামিমের পরিবার এবং তামিমকে নিজেরও আমাদের সঙ্গে কো-অপারেট করতে হবে।’
ওদিকে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে হার্ট অ্যাটাক মানসিকভাবে মেনে নিতে পারছেন না তামিম। তার সঙ্গে একজন মনোবিদও কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার, ‘তামিমের যেটা হলো, ও এটাকে নিতে পারছে না। সাইকোলজিক্যালি মানতে পারছে না। এটা হবে, সে কল্পনা করতে পারেনি। তবে এটার কিন্তু অনেক ইতিহাস আছে। অনেক খেলোয়াড় মাঠে খেলার সময় মারা গেছে, অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছে। মানসিক অবস্থার জন্য আমরা একজন কাউন্সিলর ইনভলব করেছি, এটাকে কীভাবে মানিয়ে নেওয়া যায়। ওর প্রশ্ন শুনবে, জিজ্ঞাসা শুনবে, ওর প্যানিক শুনবে, তারপর সেভাবে ওই কাউন্সিলর গাইড করবেন।’
সংবাদ সম্মেলনে হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ আরিফ মাহমুদ তামিমের বর্তমান অবস্থা নিয়ে বলেন, ‘তামিম খুবই ভালো আছেন। খাওয়াদাওয়া করছেন, সবার সঙ্গে কথা বলছেন। আজকে (গতকাল) সিসিইউ থেকে রুমে চলে যাবেন। এরপর এক বা দুই দিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। তারপর তিনি বাসায় যেতে পারবেন।’
খুলনা গেজেট/এনএম